January 16, 2021, 12:06 pm
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ভারতের মিজোরাম রাজ্য লাগোয়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে ‘সন্ত্রাসীগোষ্ঠী’ আছে। তাদের ধাওয়া দিলে দুর্গম এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায়। এজন্য বর্ডার আউটপোস্টের (বিওপি) সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্ত সড়কও হচ্ছে। বুধবার পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে অন্য দেশের সন্ত্রাসীরা যাতে প্রবেশ করতে না পারে এবং বাংলাদেশ থেকেও যাতে সন্ত্রাসীরা অন্য দেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা একে অপরকে সহযোগিতা করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলে থাকেন, আমাদের দেশের এক ইঞ্চি জমিও আমরা কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করতে দেব না এবং আমরা সেটাই করছি। তারাও (বিএসএফ) আমাদের এভাবে সহযোগিতা করছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানকার এমন কিছু এলাকা সম্পর্কে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ওইসব এলাকা থেকে সীমান্ত পার হয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী অপরাধ করে চলে যায়। আবার ওইখানে অপরাধ করে আমাদের এখানে এসে শেল্টার নেয়। এসব বন্ধ করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছি। আমরা বর্ডার রোড নির্মাণে জোর দিয়েছি। বর্ডার রোড হয়ে গেলে এসব সমস্যা থাকবে না।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হুমকির তথ্য আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে নেই। তবুও যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছ। থার্টিফার্স্টকে কেন্দ্র করে কেউ যদি কোনো অঘটন ঘটাতে চায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তো চুপ থাকবে না।
এর আগে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ২০২০ সালের বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চারটি ক্যাটাগরিতে ৫৯ জনকে পদক পরিয়ে দেন মন্ত্রী। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ১৯ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা (পিজিবিএমএস) দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বিজিবির ওপর ন্যস্ত। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদক পাচার ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবির সফলতা প্রশংসনীয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিজিবির সার্বিক কল্যাণ ও একটি আধুনিক বর্ডার ফোর্স হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে সংযোজন এনে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিজিবি এয়ার উইং উদ্বোধন এবং দুটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার সংযোজনের মধ্য দিয়ে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিজিবির সব স্তরের সদস্যের কল্যাণের জন্যও বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বিজিবির অভিযানিক কার্যক্রমে আরও গতি আসবে এবং অধিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।
২০২০ সালে বিজিবির কর্মকাণ্ডে বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা, বিজিবির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিজিবি আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এ বাহিনীতে আভিযানিক ক্ষেত্রে সংযোজিত হয়েছে ২টি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র, আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকেল, অল টেরেইন ভেহিকেল, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হাইস্পিড বোট, ইন্টারসেপ্টর বোট ও ইউটিলিটি বোটসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম।
এছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ কিমি. সীমান্ত এলাকা ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’র আওতায় আনা হয়েছে। বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রমকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে যশোরে একটি অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার ডিজাস্টার রিকভারি সাইট স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিজিবি সদস্যদের পোশাক, আবাসন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এছাড়া সর্বক্ষেত্রে বিজিবির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘বিএসএফ প্রতিবার আমাদের কিছু লোকেশন দেয়। আমরা সেখানে অপারেশন পরিচালনা করি। কিন্তু আদতে কিছুই পাই না। সেটাও আমরা বিএসএফকে জানিয়েছি। বলেছি তোমরা আমাদের যে লিস্টগুলো দিয়েছ সেগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে আমরা এরকম কোনো ক্যাম্প খুঁজে পাইনি।’